পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন(Total Internal Reflection)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পদার্থবিজ্ঞান - আলোর প্রতিসরণ (Refraction of Light) | NCTB BOOK

প্রতিফলন সম্পর্কে আলোচনা করার সময় বলা হয়েছিল যখন অত্যন্ত নিখুঁত এবং পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন প্রয়োজন হয় তখন আরনা ব্যবহার না করে পুরোপরি স্বচ্ছ মাধ্যম ব্যবহার করে এক ধরনের প্রতিফলন করানো হয়। এই প্রতিফলনের নাম পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন। এটি অত্যন্ত সহজ এবং চমকপ্রদ একটি প্রক্রিয়া, এখানে প্রতিসরণের নিয়ম ব্যবহার করে আলোক রশ্মিটি ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে পাঠাতে হয় মাত্র। 

আমরা এর মাঝে জেনে গেছি (এবং অনেকবার ব্যবহার করেছি), প্রতিসরণের সূত্র হচ্ছে 

                                                  η1sinθ1=η2sinθ2

অর্থাৎ যদি η1 থেকে η2 বড় হয় তাহলে θ2 থেকে θ1,বড় হবে। ধরা যাক তুমি একটি ঘন মাধ্যম (η2) থেকে একটি আলোক রশ্মি হালকা মাধ্যমের (η2) দিকে পাঠাচ্ছ । প্রতিসরণ এবং প্রতিফলনের নিয়ম অনুযায়ী খানিকটা আলো প্রতিফলিত হবে এবং খানিকটা প্রতিসরিত হবে।যেহেতু, θ2থেকে θ1 বড় হবে কাজেই θ2<90°° থাকতেই θ1=90° হয়ে যাবে এবং এর পর থেকে আলোর প্রতিসরিত হবার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। অর্থাৎ যখন θ1=90° হবে তখন থেকে পুরো আলোকেই প্রতিফলিত হতে হবে। θ2এর যে মানের জন্য θ1=90° হয় সেই কোণকে ক্লান্তি কোণ বা সংকট কোণ (Critical Angle) ও বলে। 

অর্থাৎ

                                         η1sin90°=η2sinθc

কিংবা 

                                          sinθc=η1η2

η1এবং η2এর মান জানা থাকলে আমরা একটি কোণ θc, বের করতে পারব যার জন্য উপরের সূত্রটি সত্যি। কাজেই সূত্রটাকে এভাবেও লেখা যেতে পারে: 

                                                 θc=sin-1η1η2

কাচের η2 = 1.52 

বাতাসের η1 = 1.00 হলে 

                                              η1η2=1.001.520.66

এটা দেখানো সম্ভব যে 

                       sin 41.8°=0.66  sin-10.66=41.8°

কাজেই ক্রান্তি কোণ θc=41.8°

অর্থাৎ যদি স্বচ্ছ কাচ থেকে বাতাসের মাঝে আলো পাঠানের সময় আলোক রশ্মি 41.8° থেকে বেশি আপাতন কোণ করে তাহলে আলোক রশ্মিটি স্বচ্ছ কাচ থেকে বের না হয়ে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়ে যায়। তোমরা যদি একটি প্রিজম সংগ্রহ করতে পারো তাহলে খুব সহজেই পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ব্যাপারটি নিজের চোখে দেখতে পাবে। 

Content added By
Content updated By

তোমরা যারা ভাবছ যে তোমরা সত্যি সত্যি কখনো পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন দেখনি তাদেরকে মনে করিয়ে দেওয়া যায় যে যারা রংধনু দেখেছে তারাই পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন দেখেছে। রংধনু তৈরি হয় পানির পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন দিয়ে। 

শুধু তাই নয়, যারা প্রিজমের অভাবে সাদা আলোকে তার রংগুলোতে ভাগ করে দেখতে পারোনি তারাও এই ব্যাপারটি রংধনুতে ঘটতে দেখেছ। বৃষ্টি হবার পরপর যদি রোদ ওঠে তাহলে আমরা রংধনু দেখি। তার কারণ তখন বাতাসে পানির কণা থাকে এবং পানির কণায় সেই আলো পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলিত হবার সময় ভিন্ন ভিন্ন রঙের আলো ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে বেঁকে যায়। এই আলোর রশ্মিগুলো দিয়ে রংধনুর ভিন্ন ভিন্ন রঙের ব্যান্ড (band) তৈরি হয়। 

তোমরা যারা রংধনু দেখেছ তারা নিশ্চয়ই আবিষ্কার করেছ এটি সব সময়ই সূর্যের বিপরীত আকাশে দেখা যায় এবং এখন তার কারণটি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ। 

 

Content added By

মরুভূমিতে মরীচিকা খুবই পরিচিত দৃশ্য। তোমরা হয়তো শুনে অবাক হবে যে মরীচিকাও রংধনুর মতো পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের কারণে ঘটে থাকে। 

কোনো কিছু পাওয়ার আশা করে শেষ পর্যন্ত না পেলে সেটাকেও মরীচিকা বলা হয় কিন্তু মূল শব্দটি এসেছে মরুভূমিতে উত্তাপের কারণে বাতাসের ঘনত্বের পরিবর্তন থেকে। যদিও আমরা জানি উত্তপ্ত বাতাস হালকা বলে উপরে চলে যায় কিন্তু মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর কারণে তার কাছাকাছি বাতাস উপরের বাতাস থেকে উত্তপ্ত থাকতে পারে। কাজেই মরুভূমির বাতাসকে আমরা 9.09 চিত্রের মতো করে কল্পনা করে নিতে পারি। 

 চিত্র 9,09:মরুভুমিতে বাতাসের ঘনত্বের পার্থক্যের কারণে মরীচিকা দেখা যায়

সহজভাবে বোঝানোর জন্য এখানে মাত্র কয়েকটি স্তরে দেখানো হয়েছে। উপরের স্তরে বাতাসের ঘনত্ব বেশি তাই প্রতিসরণাঙ্ক বেশি। নিচের স্তরে বাতাস উত্তপ্ত তাই ঘনত্ব কম এবং প্রতিসরণাঙ্কও কম। গাছ থেকে আলো প্রতিটি স্তরে প্রতিসরিত হবার সময় প্রতিসরণ কোণ বেড়ে যাবে এবং একেবারে নিচের স্তরে এসে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন হয়ে যেতে পারে। বেশি প্রতিসরণাঙ্কের থেকে কম প্রতিসরণাঙ্কের মাধ্যমে যাবার সময় দূর থেকে দেখা হলে আপাতন কোণের মান বেশি হওয়ার কারণে ক্রান্তি কোণকে অতিক্রম করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই মরীচিকাকে দূর থেকে দেখা যায়, কাছে এলে দেখা যায় না। যেহেতু কোনো মানুষ দূরের একটি গাছের দিকে তাকালে সরাসরি গাছটি দেখতে পাবে এবং পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের কারণে পাছের একটি প্রতিবিম্ব গাছের নিচেও দেখতে পাবে। মনে হবে নিচে পানি থাকার কারণে সেখানে গাছের প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। কাছে গেলে দেখা যাবে কোনো পানি নেই।পরমের দিনে উত্তপ্ত রাস্তার গাড়ি চালিয়ে যাবার সময় একই কারণে দূরে কালচে ভেজা রাস্তা দেখা যায়। সেখানে পৌঁছানোর পর দেখা যার রাস্তাটি খটখটে শুকনো। এটাও এক ধরনের মরীচিকা। 

 

Content added By
Content updated By
Promotion